Founder Speech

প্রতিষ্ঠাতার পরিচায়

প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮) শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক। টাঙ্গাইল জেলার শাবাজ নগর গ্রামে ১৮৯৪ সালে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। ১৯১২ সালে তিনি পিংনা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স, ১৯১৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতার সেন্ট পলস সিএম কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯১৬) পাস করেন। পরে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আইন বিষয়েও ডিগ্রি (১৯১৮) লাভ করেন। ইবরাহীম খাঁ ১৯১৯ সালে করটিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খাঁ পন্নীর অর্থসাহায্যে করটিয়া সা’দত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। মাঝে কিছুকাল তিনি ময়মনসিংহে আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে (১৯২০-১৯২২) সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইবরাহীম খাঁ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য এবং ১৯৫৩ সালে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭-১৯৭১ মেয়াদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৪৮-১৯৫২ মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৮ সালে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ এলাকার বিদ্যোসাহী ব্যক্তিগণের অনুরোধে ‘ভূঞাপুর কলেজ’ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর কলেজটির ‘ইবরাহীম খাঁ কলেজ’ নামকরণ করা হয়। একজন কৃতবিদ্য লেখক হিসেবেও ইবরাহীম খাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি বিভিন্ন লেখায় মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের কথা বলেছেন। নাটক, গল্প, উপন্যাস, শিশুসাহিত্য, ভ্রমণকাহিনী ও স্মৃতিকথা মিলে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা শতাদিক। সেগুলির মধ্যে কামাল পাশা (১৯২৭), আনোয়ার পাশা (১৯৩৯), ঋণ পরিশোধ (১৯৫৫), আলু বোখরা (১৯৬০), ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র (১৯৫৪), বাতায়ন (১৯৬৭), ব্যাঘ্র মামা (১৯৫১) এবং বেদুঈনদের দেশে (১৯৫৬) প্রধান। তাঁর স্মৃতিকথা বাতায়ন সমকালের মুসলিম সমাজের একটি বিশ্বস্ত দলিল হিসেবে বিবেচিত। তিনি ব্রিটিশ আমলে ‘খান সাহেব’ ও ‘খান বাহাদুর’ এবং পাকিস্তান আমলে ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন। নাটকে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ২৯ শে মার্চ খ্যাতনামা এই মানুষটি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

ি